বৃষ্টির দিন মানেই এক ধরনের রোমাঞ্চ, এক ধরনের নতুন অনুভূতি। মেঘলা আকাশ, বৃষ্টির টিপটিপ শব্দ, মাটির সোঁদা গন্ধ—এসবই যেন মনকে কেমন করে তোলে। এমনই একটি বৃষ্টির দিনে তিথি আর আদনানের গল্পের শুরু।
তিথি আর আদনান একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। দুজনেই খুব মেধাবী, তবে একজনের সাথে অন্যজনের খুব বেশি কথা হয় না। শুধু ক্লাসে দেখা হয়, আর হয়তো মাঝেমধ্যে লাইব্রেরিতে। তিথি একটু চাপা স্বভাবের, আর আদনান খুবই বন্ধুসুলভ। সবাই তাকে পছন্দ করে, তার হাসি যেন সবকিছু আলোকিত করে দেয়। কিন্তু তিথির সাথে তার কখনোই খুব বেশি কথা হয়নি।
সেই বিশেষ দিনটা ছিল একদম অন্যরকম। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে, যেন থামতেই চায় না। ক্লাস শেষে তিথি লাইব্রেরিতে কিছু বই আনতে গিয়েছিল। বইগুলো হাতে নিয়ে সে যখন বের হচ্ছে, তখনই ঘটে গেল সেই ঘটনা। হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেল, আর তিথি একদম অন্ধকারে আটকা পড়ে গেল। বৃষ্টির শব্দে চারপাশ ভরে গেছে, আর বিদ্যুতের অভাবে লাইব্রেরি যেন আরও ভৌতিক হয়ে উঠেছে।
তিথি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। এমন সময় পিছন থেকে একটি মৃদু কণ্ঠ শুনতে পেল, "তিথি, তুমি ঠিক আছো?" তিথি পিছনে ফিরে দেখলো, আদনান। তার হাতে একটি ছোট টর্চলাইট। তিথি একটু শান্ত হলো। আদনান এগিয়ে এসে বলল, "এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না, চল, আমি তোমাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছি।"
দুজনেই লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। বৃষ্টি থামেনি, বরং আরও বেড়ে গেছে। তিথি ভিজতে শুরু করলো, আর আদনান তার জ্যাকেটের হুড তিথির মাথায় দিয়ে দিল। তিথি প্রথমে অবাক হলো, কিন্তু আদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে সে কিছু বলতে পারল না। সেই মুহূর্তে তিথি বুঝলো, আদনানের মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে অন্যরকম করে তোলে।
বৃষ্টি বাড়তেই থাকলো, আর তারা একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিল। তিথি একটু ভিজে গেছে, কিন্তু তার চোখে-মুখে একধরনের খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। আদনান বললো, "তোমার ভেজা ভালো লাগছে না?"
তিথি মৃদু হেসে বলল, "আসলে, আজকের এই বৃষ্টিটা যেন অন্যরকম।" আদনানও হেসে ফেলল। তারা দুজনেই বৃষ্টির শব্দে মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
হঠাৎ করে আদনান বললো, "তুমি কি জানো, তিথি, আমি অনেকদিন ধরেই তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু কখনোই সাহস পাইনি। আজকের এই বৃষ্টি যেন আমাকে সেই সাহসটা দিয়েছে।"
তিথি অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকালো। সে বলল, "তুমি কেন আমাকে বললে না আগে?"
আদনান হাসিমুখে বলল, "আমরা সবাই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহস পাই না। কিন্তু আজ, এই বৃষ্টির দিনে, আমি বলতে পেরেছি।"
তিথি একটু লজ্জা পেল। সে বুঝলো, তারও আদনানের প্রতি একধরনের অনুভূতি আছে। তারা দুজনেই বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে, একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। বৃষ্টির শব্দ যেন তাদের হৃদয়ের কথা বলে দিচ্ছে।
সেদিনের পর থেকে তিথি আর আদনান আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো। বৃষ্টির দিনগুলো তাদের কাছে বিশেষ হয়ে রইলো। প্রতিটি বৃষ্টির দিনে তারা একসাথে সময় কাটাতো, গল্প করতো, হাসতো। বৃষ্টি যেন তাদের হৃদয়ের বন্ধনকে আরও মজবুত করে তুলেছিল।
তাদের গল্পের শুরুটা বৃষ্টির দিনে হলেও, তাদের ভালোবাসার গল্পটা সারা জীবনের জন্য। প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় তাদের ভালোবাসার নতুন অধ্যায় লেখা হয়ে যায়। বৃষ্টির সেই দিনের কথা তারা কখনো ভুলবে না, কারণ সেদিনই তো তাদের জীবনের সবচেয়ে রোমান্টিক অধ্যায়ের শুরু।
- Get link
- X
- Other Apps
Labels
Story- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment