Skip to main content

ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে কি কি ক্ষতি হয় জানলে অবাক হবেন

 


ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি


ওষুধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হলেও, প্রায় সব ধরনের ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কখনও এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো সামান্য এবং অস্থায়ী হয়ে থাকে, আবার কখনও তা গুরুতর হয়ে জীবননাশের কারণও হতে পারে। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোগীর শারীরিক অবস্থা, বয়স, জিনগত বৈশিষ্ট্য, ওষুধের ধরন এবং সঠিক নিয়মে সেবন করা হয়েছে কি না তার ওপর নির্ভর করে। এই প্রবন্ধে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে কী কী ক্ষতি হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১. পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি

অনেক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দেয়।

ক. বমি ও বমিভাব

অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ এবং ক্যানসারের ওষুধের কারণে অনেকের বমি বা বমিভাব হতে পারে। এটি শরীরের জন্য খুবই অস্বস্তিকর এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

খ. ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। আবার কিছু ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

গ. আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা

ব্যথানাশক ওষুধ (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন ও ডাইক্লোফেনাক দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পাকস্থলীতে ক্ষত বা আলসার তৈরি করতে পারে, যা কখনও কখনও রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।

২. লিভার ও কিডনির ক্ষতি

ক. লিভারের সমস্যা

অনেক ওষুধ লিভারে বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ সেবন বা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা হেপাটাইটিস বা লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্যারাসিটামল অতিরিক্ত গ্রহণ করলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

খ. কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস

অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে কিডনি ঠিকমতো ফিল্টারিং করতে না পারলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়।

৩. স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব

ক. মাথা ঘোরা ও ঝিমুনি

অনেক সেডেটিভ ওষুধ (যেমন ঘুমের ওষুধ বা অ্যান্টিহিস্টামিন) মাথা ঘোরানো ও ঝিমুনির কারণ হতে পারে। এতে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

খ. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমে যাওয়া

কিছু সাইকোট্রপিক ওষুধ (যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ) দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

গ. খিঁচুনি ও স্নায়বিক সমস্যা

কিছু ওষুধ, বিশেষ করে স্টেরয়েড বা কিছু মানসিক রোগের ওষুধ, খিঁচুনির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৪. হৃদযন্ত্র ও রক্তচাপের উপর প্রভাব

ক. উচ্চ রক্তচাপ

কিছু ডিকনজেস্ট্যান্ট ওষুধ (যেমন ঠান্ডার ওষুধ) রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

খ. হৃদস্পন্দনের অনিয়মিততা (Arrhythmia)

কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক হৃদস্পন্দনের গতি অনিয়মিত করতে পারে, যা গুরুতর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

৫. ত্বকের সমস্যা

ক. অ্যালার্জি ও র‍্যাশ

অনেক ওষুধ ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক বা কিছু ব্যথানাশক ওষুধ। কখনও কখনও এটি অ্যানাফাইল্যাক্সিস নামে প্রাণঘাতী অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

খ. সূর্যালোকে সংবেদনশীলতা

কিছু ওষুধ ত্বককে সূর্যের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে, ফলে খুব সহজেই সানবার্ন বা ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

৬. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

ক. উদ্বেগ ও বিষণ্নতা

কিছু ওষুধ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা স্টেরয়েড সেবনের ফলে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে।

খ. আত্মহত্যার প্রবণতা

কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের (যেমন SSRI) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।

৭. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

ক. ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস

কিছু ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড বা ইনসুলিন) দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, আবার কিছু ওষুধ (যেমন থাইরয়েডের ওষুধ) ওজন কমিয়ে দিতে পারে।

খ. মাসিক চক্রের অনিয়ম

কিছু হরমোনাল ওষুধ (যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল) মাসিক চক্র অনিয়মিত করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে বন্ধও করে দিতে পারে।

উপসংহার

ওষুধ আমাদের রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা এবং সতর্ক থাকা জরুরি। ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজন ছাড়া ওষুধ গ্রহণ না করাই উত্তম। পাশাপাশি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সতর্ক ও সচেতন থাকলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।



Comments

Popular posts from this blog

চোখের নিচে বালি রেখা দূর করার উপায়

  চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles) অনেকের জন্যই বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বা বয়স বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চোখের চারপাশের কালচে দাগ হওয়ার কারণ চোখের চারপাশের কালচে দাগ (Dark Circles) হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, বয়স বৃদ্ধিজনিত ত্বকের পরিবর্তন, পানিশূন্যতা, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ, জেনেটিক কারণ ও অনিয়মিত জীবনযাপন। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি: ১. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের অভাবে চোখের চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা কালো দাগ হয়। তাই রাতে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ২. শসার ব্যবহার শসার রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। চোখের ব্যবহার করলে অনেকটা কালো দাগ কমবে। ক...

ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়

  ত্বকের কালো দাগ দূর করার সহজ ও কার্যকর উপায় Pimple  ত্বকের কালো দাগ অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ হতে পারে। ব্রণ, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি, হরমোনজনিত পরিবর্তন, বা ত্বকের আঘাতের কারণে এসব দাগ দেখা দিতে পারে। তবে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসার মাধ্যমে  ত্বকের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু উপকারী উপায়— ১. লেবুর রস ও মধু ব্যবহার করুন লেবুর রসে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সংবেদনশীল ত্বকে লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। ২. অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। ৩. কাঁচা হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন Tarmaric powder  হলুদে থাকা কিউমারিন যৌগ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ কা...

সরিষার তেলের গোপন তথ্য / sorisa teler karjokarita

  সরিষার তেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শুধু রান্নার কাজেই নয়, বরং শারীরিক যত্নেও বহুল ব্যবহৃত। বিশেষ করে নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার বিষয়টি আমাদের লোকজ চিকিৎসা ও আর্বুদ চর্চায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহ্যগত কারণও রয়েছে। চলুন, জেনে নিই নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার উপকারিতা ও সম্ভাব্য প্রভাব। ১. ত্বকের যত্নে সহায়তা নাভি শরীরের একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যা ত্বকের তেল নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা নাভির চারপাশে ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। এটি ত্বককে মসৃণ এবং কোমল রাখতেও সাহায্য করে। ২. হজম শক্তি উন্নত করে (sorisa) নাভিতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে হজম প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, নাভির মাধ্যমে তেলের উপাদান শরীরে প্রবেশ করে হজমের কার্যক্রম উন্নত করতে পারে। এটি গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। ৩. হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখা নাভিকে শরীরের কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। সরিষার তেলের মতো প্রাকৃতিক তেল নাভিতে দিলে ...