Skip to main content

রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল নিবেন কি নিবেন না জেনে নিন

 

রয়েল এনফিল্ড

রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল: সুবিধা ও অসুবিধা

রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল শুধু একটি বাহন নয়, এটি একটি আবেগ, একটি ঐতিহ্য। ভারতীয় এই মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড দীর্ঘ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে রাইডারদের মন জয় করে আসছে। বিশেষ করে ক্লাসিক ও রেট্রো ডিজাইনের কারণে রয়েল এনফিল্ড বাইকগুলোর আলাদা কদর রয়েছে। তবে  অন্যান্য মোটরসাইকেলের মতোই রয়েল এনফিল্ডেরও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। আসুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।


রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের সুবিধা

১. ক্লাসিক ডিজাইন ও প্রিমিয়াম লুক

রয়েল এনফিল্ড




রয়েল এনফিল্ডের বাইকগুলো মূলত রেট্রো ও ক্লাসিক লুকের জন্য বিখ্যাত। বিশাল ফুয়েল ট্যাঙ্ক, ক্রোম ফিনিশিং, বুলেটের মতো টেকসই বডি এবং প্রিমিয়াম ফিনিশিং বাইকপ্রেমীদের কাছে এটি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

২. শক্তিশালী ও টর্কি ইঞ্জিন

রয়েল এনফিল্ডের বাইকগুলোর ইঞ্জিন বেশ শক্তিশালী। বিশেষ করে ৩৫০সিসি থেকে ৬৫০সিসি পর্যন্ত পাওয়ারফুল ইঞ্জিন পাওয়া যায়, যা দীর্ঘ রাইডের জন্য উপযুক্ত। টর্ক (Torque) বেশ ভালো থাকায় দ্রুতগতিতে এক্সিলারেশন পাওয়া যায় এবং পাহাড়ি বা অফ-রোড এলাকায় চালানো সহজ হয়।

৩. আরামদায়ক রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স

রয়েল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তা




এর হেভি চ্যাসিস ও সাসপেনশন আরামদায়ক রাইডিং নিশ্চিত করে। দীর্ঘ দূরত্বের রাইডে কম কম্পন এবং নরম সিটের কারণে রাইডাররা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন।

৪. ট্যুরিং-এর জন্য আদর্শ

অনেক বাইকার রয়েল এনফিল্ডকে ট্যুরিংয়ের জন্য বেছে নেন। হিমালয়ান, মেটিওর ৩৫০ এবং ইন্টারসেপ্টর ৬৫০-এর মতো মডেলগুলো দীর্ঘ যাত্রার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ফুয়েল ট্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি ভালো থাকায় একবার ফিলআপ করলেই অনেক দূর যাওয়া সম্ভব।

৫. শক্তপোক্ত গঠন ও দীর্ঘস্থায়িত্ব

এটি এমন একটি বাইক যা কয়েক দশক টিকতে পারে। এর ধাতব বডি ও টেকসই গঠন অন্যান্য মোটরসাইকেলের তুলনায় বেশি স্থায়িত্ব দেয়।

৬. ব্যতিক্রমী এক্সহস্ট সাউন্ড (Bullet Thump)

রয়েল এনফিল্ডের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর অনন্য এক্সহস্ট সাউন্ড। ‘ঠাক ঠাক’ শব্দটি অনেক বাইকারের কাছে দারুণ পছন্দের এবং এটি ব্র্যান্ডের পরিচয় বহন করে।

৭. সহজ কাস্টমাইজেশন ও মডিফিকেশন

এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সহজেই কাস্টমাইজ করা যায়। রাইডাররা নিজেদের মতো করে লুক, এক্সহস্ট, হ্যান্ডেলবার ও অন্যান্য পার্ট পরিবর্তন করতে পারেন।

৮. ভালো রিসেল ভ্যালু

রয়েল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তা




রয়েল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তার কারণে এর রিসেল ভ্যালু ভালো থাকে। পুরাতন বাইকও ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব।


রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের অসুবিধা

১. ওজন বেশি হওয়া

অন্যান্য মোটরসাইকেলের তুলনায় রয়েল এনফিল্ডের ওজন বেশি (প্রায় ১৮০-২০০ কেজি)। নতুন রাইডারদের জন্য এটি হ্যান্ডলিংয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত রাস্তায়।

২. কম মাইলেজ

রয়েল এনফিল্ডের মাইলেজ তুলনামূলক কম। সাধারণত ৩৫০সিসি মডেলগুলোতে ৩০-৩৫ কিমি প্রতি লিটার এবং ৬৫০সিসি মডেলগুলোর মাইলেজ আরও কম হতে পারে। ফলে যারা ভালো মাইলেজ চান, তাদের জন্য এটি চিন্তার বিষয়।

৩. বেশি মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন

এটি একটি হেভি মেশিন, তাই নিয়মিত মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজন হয়। তেল পরিবর্তন, চেইন ও ব্রেক সিস্টেম ঠিক রাখা, ইঞ্জিন পরিষ্কার করা—এগুলো নিয়মিত করতে হয়।

৪. স্পেয়ার পার্টস ব্যয়বহুল ও কমন নয়

অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তুলনায় রয়েল এনফিল্ডের স্পেয়ার পার্টস একটু দামি এবং সহজলভ্য নয়, বিশেষ করে ছোট শহর বা গ্রামীণ এলাকায়।

৫. উচ্চ কম্পন (Vibration Issue)

পুরোনো মডেলগুলোর ইঞ্জিনে কম্পন অনেক বেশি ছিল, যা দীর্ঘ রাইডে হাত ও পায়ে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। যদিও নতুন মডেলগুলোতে এই সমস্যা অনেকটা কমানো হয়েছে, তবে এটি সম্পূর্ণ দূর হয়নি।

৬. গিয়ারবক্স তুলনামূলক কঠিন

অনেক রাইডার অভিযোগ করেন যে রয়েল এনফিল্ডের গিয়ারবক্স তুলনামূলক কঠিন ও স্টিফ। নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য গিয়ার পরিবর্তন করা প্রথমে কিছুটা কঠিন হতে পারে।

৭. উচ্চ মূল্যে বাইক

রয়েল এনফিল্ডের দাম অন্যান্য ৩৫০সিসি বা ৬৫০সিসি বাইকের তুলনায় বেশি। ফলে অনেক রাইডারের জন্য এটি কেনা একটু কঠিন হতে পারে।


উপসংহার

রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল হলো বাইকপ্রেমীদের জন্য একটি আবেগের নাম। শক্তিশালী ইঞ্জিন, ক্লাসিক লুক, ট্যুরিংয়ের জন্য আদর্শ হওয়া, টেকসই গঠন—এসব কারণে এটি একটি জনপ্রিয় পছন্দ। তবে কম মাইলেজ, বেশি ওজন, উচ্চ কম্পন, দামি স্পেয়ার পার্টস ও বেশি মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজনের মতো কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

যদি আপনি ক্লাসিক বাইক পছন্দ করেন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চান এবং বাইকের সঙ্গে এক ধরনের সংযোগ অনুভব করতে চান, তবে রয়েল এনফিল্ড হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ। তবে যদি মাইলেজ, কম্পন বা ওজন আপনার জন্য সমস্যা হয়, তাহলে অন্য ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিবেচনা করাই ভালো।



Comments

Popular posts from this blog

চোখের নিচে বালি রেখা দূর করার উপায়

  চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles) অনেকের জন্যই বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বা বয়স বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চোখের চারপাশের কালচে দাগ হওয়ার কারণ চোখের চারপাশের কালচে দাগ (Dark Circles) হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, বয়স বৃদ্ধিজনিত ত্বকের পরিবর্তন, পানিশূন্যতা, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ, জেনেটিক কারণ ও অনিয়মিত জীবনযাপন। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি: ১. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের অভাবে চোখের চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা কালো দাগ হয়। তাই রাতে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ২. শসার ব্যবহার শসার রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। চোখের ব্যবহার করলে অনেকটা কালো দাগ কমবে। ক...

ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়

  ত্বকের কালো দাগ দূর করার সহজ ও কার্যকর উপায় Pimple  ত্বকের কালো দাগ অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ হতে পারে। ব্রণ, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি, হরমোনজনিত পরিবর্তন, বা ত্বকের আঘাতের কারণে এসব দাগ দেখা দিতে পারে। তবে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসার মাধ্যমে  ত্বকের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু উপকারী উপায়— ১. লেবুর রস ও মধু ব্যবহার করুন লেবুর রসে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সংবেদনশীল ত্বকে লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। ২. অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। ৩. কাঁচা হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন Tarmaric powder  হলুদে থাকা কিউমারিন যৌগ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ কা...

সরিষার তেলের গোপন তথ্য / sorisa teler karjokarita

  সরিষার তেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শুধু রান্নার কাজেই নয়, বরং শারীরিক যত্নেও বহুল ব্যবহৃত। বিশেষ করে নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার বিষয়টি আমাদের লোকজ চিকিৎসা ও আর্বুদ চর্চায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহ্যগত কারণও রয়েছে। চলুন, জেনে নিই নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার উপকারিতা ও সম্ভাব্য প্রভাব। ১. ত্বকের যত্নে সহায়তা নাভি শরীরের একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যা ত্বকের তেল নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা নাভির চারপাশে ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। এটি ত্বককে মসৃণ এবং কোমল রাখতেও সাহায্য করে। ২. হজম শক্তি উন্নত করে (sorisa) নাভিতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে হজম প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, নাভির মাধ্যমে তেলের উপাদান শরীরে প্রবেশ করে হজমের কার্যক্রম উন্নত করতে পারে। এটি গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। ৩. হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখা নাভিকে শরীরের কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। সরিষার তেলের মতো প্রাকৃতিক তেল নাভিতে দিলে ...