রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস, বছরের ১১ মাস খাবার অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে রোজার মাসে খাবার সময় পরিবর্তন হয় যাবার কারণে আমাদের শরীরে adjust হতে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় । তাই রমজান মাসে আমাদেরকে খাবার দাবার খাওয়ার দিক থেকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই সুস্থভাবে পবিত্র রমজান পালন করতে হলে বিশেষভাবে খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাবার তালিকা স্বাস্থ্যসম্মত না করলে রোজা করাটাই আপনার জন্য হয়ে উঠবে দুর্বিসহ। তাই আসুন এই মাসে আমরা স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।
রোজাদারদের জন্য উপযুক্ত খাবার, সেহরি ও ইফতারে কী খাওয়া উচিত, কী এড়িয়ে চলা ভালো এবং রোজার সময় শরীর সুস্থ রাখার জন্য কিছু কার্যকরী পরামর্শ আলোচনা করব।
সেহরির খাবার কেমন হওয়া উচিত?
সেহরি দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার, কারণ এটি সারা দিন শক্তি সরবরাহ করে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর সেহরি খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা ও ক্লান্তি দূরে রাখা যায়। তাই রোজার সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী স্বাস্থ্যকর খাবার শরীর মন দুটোকেই ভালো রাখে।
সেহরির জন্য উপযুক্ত খাবার
১. জটিল কার্বোহাইড্রেট:
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া আমাদের অত্যন্ত জরুরী । কারণ কার্বোহাইড্রেট ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। যা খাওয়া উচিত
যেমন: ওটস, লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ছোলা, মিষ্টি আলু, ডাল।
2. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার:
প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান যা আমাদের শরীরকে পরিচালিত করতে অনেক সাহায্য করে । প্রোটিন পেশির গঠনে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে হচ্ছে যেমন: ডিম, দুধ, দই, বাদাম, মাংস, মাছ, চিজ।
3. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখে। যেমন: অলিভ অয়েল, বাদাম, চিয়া সিড, ফ্লাক্স সিড, অ্যাভোকাডো নারকেল তেল।
4. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকে সহায়তা করে যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি দেয়।
যেমন: সবজি, ফলমূল (আপেল, কলা, খেজুর, বেরি জাতীয় ফল)।
5. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার:
কথাই বলে পানির অপর নাম জীবন কারণ শরীরের তিন ভাগ পানি দ্বারা পরিচালিত হয় তাই পানিশূন্যতা কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
যেমন: ডাবের পানি, লেবুর শরবত, হালকা স্যুপ, দুধ।
সেহরিতে কী এড়িয়ে চলবেন?
1. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার:
অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর লবণযুক্ত খাবার শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
যেমন: আচার, চিপস, ফাস্ট ফুড।
2. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার:
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম তিনি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তা কমে গিয়ে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
যেমন: মিষ্টি, সফট ড্রিংকস, অতিরিক্ত চিনি মেশানো শরবত।
3. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়:
যেমন: চা, কফি, সফট ড্রিংকস। এগুলো প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।
ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত?
সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর দ্রুত শক্তি চায়। তাই ইফতারের খাবার হতে হবে সহজে হজমযোগ্য ও পুষ্টিকর।
ইফতারের জন্য উপযুক্ত খাবার
1. খেজুর:
খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার প্রাকৃতিক শর্করা ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
2. পানীয়:
পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, যাতে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়।
যেমন: ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস, দুধ।
3. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার:
বিভিন্ন ফল মূল ও মুরগি, মাছ, ডাল, ডিম, দই শরীরের শক্তি বজায় রাখে।
4. জটিল কার্বোহাইড্রেট:
লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ছোলা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।
ইফতারে কী এড়িয়ে চলবেন?
1. ভাজা-পোড়া খাবার:
অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
যেমন: সমুচা, পাকোড়া, বেগুনি।
2. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি:
শরীরে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তী সময়ে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
3. অতিরিক্ত চা-কফি:
ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
4. অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার:
এটি গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল সৃষ্টি করতে পারে। তাই মসলাযুক্ত তৈলাক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত
রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিত?
ইফতার ও সেহরির মাঝে একটি স্বাস্থ্যকর রাতের খাবার খাওয়া উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় এবং পরবর্তী দিনের রোজার জন্য শরীর প্রস্তুত হয়। রাতের খাবারের জন্য উপযুক্ত খাবার লাল চালের ভাত বা আটার রুটি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, মাংস, ডাল) সবজি ও সালাদ দই বা দুধ পর্যাপ্ত পানি।
রোজার সময় শরীর সুস্থ রাখার কিছু টিপস
1. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে কিলান্তি কম হবে।
2. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন:
প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীর মন ভালো থাকবে।
3. অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
অনেকেই ইফতারে বেশি খেয়ে ফেলে, যা পরবর্তী সময়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বদহজম গ্যাস হতে পারে যা রোজার মাসে অস্থিরতার সৃষ্টি করে।
4. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন:
হাঁটা বা হালকা স্ট্রেচিং শরীরকে সক্রিয় রাখে।
5. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ক্লান্তি ও অবসাদ আসতে পারে।
উপসংহার
রমজানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরকে সুস্থ রাখে, শক্তি জোগায় এবং ইবাদতে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য কররে। সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার এড়িয়ে চললে রোজাদাররা সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে পারবেন। তাই, সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং রমজানের প্রতিটি দিন উপভোগ করুন।
আরো অনেক তথ্য পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
htps://raselblogs24bd.blogspot.com/
Comments
Post a Comment