শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই। ডাক্তাররা সবসময় পরামর্শ দেন, ভাত-রুটি যতটুকুই খান না কেন, তার সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাকসবজি রাখতে হবে। কারণ শাকসবজি শুধু ভিটামিন আর খনিজের উৎস নয়, এটি শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে পাচনশক্তি উন্নত করা পর্যন্ত নানা উপকার করে থাকে। তবে অনেকের প্রশ্ন—ডাক্তারদের মতে কোন শাকসবজি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১. পালং শাক
ডাক্তারদের মতে পালং শাক হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাক। এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও কে। যারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন, তাদের জন্য পালং শাক অত্যন্ত কার্যকর। এটি রক্ত বাড়ায়, চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে এবং হাড় মজবুত করে।
২. লাল শাক
লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে। এটি রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে। ডাক্তাররা বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের লাল শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৩. ঢেঁড়স
ঢেঁড়সের ভেতরে থাকা আঁশ হজমশক্তি উন্নত করে। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁড়স খুবই উপকারী। এছাড়া ঢেঁড়সে ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. করলা
করলা অনেকের কাছে অপছন্দ হলেও ডাক্তারদের মতে এটি অন্যতম প্রয়োজনীয় সবজি। করলা রক্ত পরিষ্কার করে, লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত করলা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৫. লাউ
গরমকালে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে লাউ অত্যন্ত কার্যকর। এতে ক্যালরি খুব কম থাকায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের রোগীদের খাদ্যতালিকায় লাউ রাখার পরামর্শ দেন।
৬. শসা
শসা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। এতে ভিটামিন-সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করে। ডাক্তাররা বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন শসা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৭. ব্রকলি
যদিও বাংলাদেশে ব্রকলি নতুন সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে, তবুও ডাক্তারদের মতে এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এতে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ফাইবার এবং অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে। নিয়মিত ব্রকলি খেলে শরীর ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে কিছুটা সুরক্ষিত থাকে।
৮. মিষ্টি কুমড়া
মিষ্টি কুমড়ায় বিটা-ক্যারোটিন প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা চোখের জন্য ভালো এবং শরীরে ভিটামিন-এ তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক সুন্দর রাখে।
উপসংহার
ডাক্তাররা সর্বদা বলেন, “একটি নয়, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি থাকতে হবে।” পালং, লাল শাক, ঢেঁড়স, করলা, লাউ, শসা, ব্রকলি বা মিষ্টি কুমড়া—সবকিছু পরিমিত পরিমাণে খেলে শরীর পায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ। শুধু একটি নির্দিষ্ট শাক নয়, বরং বিভিন্ন শাকসবজি মিলিয়েই শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই প্রতিদিনের প্লেটে ভাত বা রুটির সাথে অন্তত এক-দুটি শাকসবজি অবশ্যই রাখুন।
Comments
Post a Comment