সুন্দর, উজ্জ্বল ও সুস্থ ত্বক সকলেরই কাম্য। কিন্তু বয়স, পরিবেশের প্রভাব, দূষণ, মানসিক চাপ এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় দামি প্রসাধনী ব্যবহার করেও ত্বককে সুস্থ রাখা যায় না, কারণ ভেতর থেকে ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয় না। আর এই ভেতরের যত্নের মূল উপাদান হলো ভিটামিন। সঠিক ভিটামিন গ্রহণ করলে শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে না, বরং বলিরেখা,
দাগ, ব্রণসহ নানা সমস্যাও কমে যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে কোন কোন ভিটামিন প্রয়োজন—
১. ভিটামিন এ
ভিটামিন এ ত্বককে স্বস্থ্যকর রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলোর একটি। এটি ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং রুক্ষ, শুষ্ক বা খসখসে ত্বক প্রতিরোধ করে। এছাড়া এটি ব্রণ কমাতেও ভূমিকা রাখে। রেটিনল, যা ভিটামিন এ-এর একধরনের উপাদান, তা ত্বকের বয়সজনিত বলিরেখা হ্রাস করতে কার্যকর।
উৎস: গাজর, মিষ্টি আলু, পালং শাক, ডিম, মাছের তেল ইত্যাদি।
২. ভিটামিন সি
ভিটামিন সি হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে ফ্রি র্যাডিকেল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, ফলে ত্বক থাকে টানটান ও মসৃণ। নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে ব্রণের দাগ ও পিগমেন্টেশন কমে এবং ত্বক হয় উজ্জ্বল।
উৎস: কমলা, লেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, ব্রকলি, টমেটো, বেল পেপার।
৩. ভিটামিন ই
ভিটামিন ই কে “ত্বকের ভিটামিন” বলা হয়। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এ ভিটামিন ত্বকের শুষ্কতা ও অকাল বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়ক। অনেক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টেও ভিটামিন ই ব্যবহার করা হয়।
উৎস: বাদাম, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, কাজু, বীজজাতীয় খাবার।
৪. ভিটামিন ডি
শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ ও হাড়ের স্বাস্থ্য যেমন ভিটামিন ডি-এর ওপর নির্ভর করে, তেমনি ত্বকের সুস্থতার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর অভাবে অনেক সময় ত্বকে অ্যালার্জি, একজিমা বা প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস।
উৎস: সকালের রোদ, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ।
৫. ভিটামিন কে
ত্বকের দাগ বা কালো দাগ দূর করতে ভিটামিন কে কার্যকর। এটি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল, ক্ষত বা আঘাতজনিত কালচে দাগ দূর করে।
উৎস: ব্রকলি, কেল, পালং শাক, বাঁধাকপি, মাছ, দুধ।
৬. বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন
বি ভিটামিন ত্বকের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সমান জরুরি। বিশেষ করে ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিনামাইড) ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি৫ ত্বককে নরম ও মসৃণ করে। ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন) চুল ও ত্বকের সুস্থতায় অপরিহার্য।
উৎস: ডিম, দুধ, শস্য, ডাল, কলা, বাদাম।ত্বকের জন্য ভিটামিন গ্রহণের উপকারিতাত্বক হয় উজ্জ্বল ও টানটান।
ব্রণ, দাগ ও পিগমেন্টেশন কমে যায়।বয়সজনিত বলিরেখা ও ঝুলে পড়া ত্বক প্রতিরোধ হয়।ত্বক থাকে আর্দ্র ও নরম।সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
ভিটামিন গ্রহণের সঠিক উপায়
ভিটামিন পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস। সবজি, ফল, শস্য, দুধ, মাছ ও ডিম নিয়মিত খেলে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।
উপসংহার
ত্বকের সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক যত্নের ওপর নির্ভর করে না, বরং ভেতর থেকে পুষ্টি পাওয়াটাই মূল বিষয়। সঠিক ভিটামিন গ্রহণের মাধ্যমে ত্বক হয়ে ওঠে সুস্থ, উজ্জ্বল ও বয়স প্রতিরোধী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন এবং প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের যত্ন নিন।
Comments
Post a Comment