Skip to main content

কাকরোল এর পুষ্টি গুনাগুন

 

কাঁকরোল

বাংলাদেশে বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমের একটি জনপ্রিয় সবজি হলো কাঁকরোল। গ্রামীণ আঙিনায় সহজেই জন্মে এবং বাজারেও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। স্বাদে হালকা ও মজাদার এই সবজি ভাজি, ভর্তা, তরকারি কিংবা মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে কাঁকরোল শুধু স্বাদেই নয়, বরং পুষ্টিগুণেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁকরোল অন্তর্ভুক্ত করা গেলে শরীর নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান পায়, যা সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য।


কাঁকরোলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও আঁশ রয়েছে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন–এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং ত্বককে রাখে সতেজ। অন্যদিকে ভিটামিন–সি শরীরে কোলাজেন তৈরি করে, যা ত্বক ও মাংসপেশির দৃঢ়তা বজায় রাখে। একই সঙ্গে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে, সর্দি–কাশিসহ বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।


এই সবজিতে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে অ্যানিমিয়া দূর করতে সহায়তা করে, আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁতকে শক্ত করে। এছাড়া ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।


কাঁকরোলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর উচ্চ আঁশ। খাদ্যআঁশ হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁকরোল একটি উপকারী সবজি। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম হওয়ায় যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্যও কাঁকরোল আদর্শ খাবার।


কাঁকরোলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি–র‍্যাডিক্যাল দূর করে। এর ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও বয়সজনিত নানা জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। নিয়মিত কাঁকরোল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ ও সবল থাকতে সহায়তা করে।


গ্রামীণ জীবনে কাঁকরোল অনেক সময় অবহেলিত হলেও এটি আসলে একটি মূল্যবান সবজি। সহজলভ্য, সস্তা এবং পুষ্টিকর এই সবজি শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষের জন্য সমানভাবে উপকারী।


সর্বোপরি বলা যায়, কাঁকরোল একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এতে যেমন রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ, তেমনি আছে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শক্তি। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁকরোল রাখা গেলে পরিবার–পরিজন সবাই সুস্থ ও সবল থাকতে পারবে।

Comments

Popular posts from this blog

চোখের নিচে বালি রেখা দূর করার উপায়

  চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles) অনেকের জন্যই বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বা বয়স বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চোখের চারপাশের কালচে দাগ হওয়ার কারণ চোখের চারপাশের কালচে দাগ (Dark Circles) হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, বয়স বৃদ্ধিজনিত ত্বকের পরিবর্তন, পানিশূন্যতা, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ, জেনেটিক কারণ ও অনিয়মিত জীবনযাপন। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি: ১. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের অভাবে চোখের চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা কালো দাগ হয়। তাই রাতে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ২. শসার ব্যবহার শসার রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। চোখের ব্যবহার করলে অনেকটা কালো দাগ কমবে। ক...

ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়

  ত্বকের কালো দাগ দূর করার সহজ ও কার্যকর উপায় Pimple  ত্বকের কালো দাগ অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ হতে পারে। ব্রণ, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি, হরমোনজনিত পরিবর্তন, বা ত্বকের আঘাতের কারণে এসব দাগ দেখা দিতে পারে। তবে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসার মাধ্যমে  ত্বকের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু উপকারী উপায়— ১. লেবুর রস ও মধু ব্যবহার করুন লেবুর রসে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সংবেদনশীল ত্বকে লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। ২. অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। ৩. কাঁচা হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন Tarmaric powder  হলুদে থাকা কিউমারিন যৌগ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ কা...

সরিষার তেলের গোপন তথ্য / sorisa teler karjokarita

  সরিষার তেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শুধু রান্নার কাজেই নয়, বরং শারীরিক যত্নেও বহুল ব্যবহৃত। বিশেষ করে নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার বিষয়টি আমাদের লোকজ চিকিৎসা ও আর্বুদ চর্চায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহ্যগত কারণও রয়েছে। চলুন, জেনে নিই নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার উপকারিতা ও সম্ভাব্য প্রভাব। ১. ত্বকের যত্নে সহায়তা নাভি শরীরের একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যা ত্বকের তেল নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা নাভির চারপাশে ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। এটি ত্বককে মসৃণ এবং কোমল রাখতেও সাহায্য করে। ২. হজম শক্তি উন্নত করে (sorisa) নাভিতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে হজম প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, নাভির মাধ্যমে তেলের উপাদান শরীরে প্রবেশ করে হজমের কার্যক্রম উন্নত করতে পারে। এটি গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। ৩. হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখা নাভিকে শরীরের কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। সরিষার তেলের মতো প্রাকৃতিক তেল নাভিতে দিলে ...