শীতের মরসুম প্রকৃতির এক অন্যরকম আবহ নিয়ে আসে। ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশা আর কম তাপমাত্রা—সব মিলিয়ে মানুষ যেমন নতুন করে অভিযোজিত হয়, ঠিক তেমনি গাছপালাও এই পরিবর্তনের সাথে
খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করে। বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে টবে লাগানো গাছগুলো শীতে দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যা না পেলে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শীতে গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি, যা গাছকে শুধু টিকে রাখেই না, বরং নতুন মৌসুমের জন্য আরও শক্তিশালী করে তোলে।
খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করে। বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে টবে লাগানো গাছগুলো শীতে দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যা না পেলে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শীতে গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি, যা গাছকে শুধু টিকে রাখেই না, বরং নতুন মৌসুমের জন্য আরও শক্তিশালী করে তোলে।
প্রথমত, শীতে গাছের মাটি দ্রুত শুকিয়ে না গেলেও মাটির ভেতরে আর্দ্রতা কমে যেতে থাকে। তাই মাটি নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি। শুকনো দেখালেই পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি শিকড় পচিয়ে ফেলতে পারে। শীতে পানি দেওয়া উচিত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে, কারণ এই সময় তাপমাত্রা তুলনামূলক একটু বেশি থাকে এবং গাছ সহজে পানি শোষণ করতে পারে। টবে পানি দেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে টবের নিচে ড্রেনেজ হোল আছে, যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, শীতের কনকনে বাতাস গাছের পাতা খুব দ্রুত শুকিয়ে ফেলে। তাই গাছকে বাতাসের সরাসরি ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বারান্দা বা ছাদের কোণে, যেখানে বাতাস কম লাগে এমন স্থানে গাছগুলো রাখা ভালো। চাইলে গাছের চারপাশে অস্থায়ী উইন্ডব্রেক তৈরি করা যায়—যেমন পুরোনো কাপড়, কার্টন বা পাতলা প্লাস্টিক দিয়ে একটি ঢালের মতো ব্যবস্থা করা।
তৃতীয়ত, গাছকে উষ্ণ রাখতে সূর্যালোক অত্যন্ত জরুরি। শীতে সূর্যের আলো তুলনামূলক কম থাকে, তাই যেদিন সূর্য ওঠে, সেদিন যতটা সম্ভব গাছকে রোদে রাখতে হবে। সকালে ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রোদ গাছের জন্য সবচেয়ে উপকারী। যারা ঘরের ভেতরে গাছ রাখেন, তারা জানালার পাশে বা দক্ষিণমুখী আলোকিত স্থানে গাছ সরিয়ে রাখতে পারেন।
চতুর্থত, অনেকেই শীতে সার দিতে দ্বিধায় থাকেন—এটি ভুল। শীতের শেষ দিকে বা মাঝামাঝি সামান্য জৈবসার মাটির উপরে ছিটিয়ে দিলে গাছ ধীরে ধীরে পুষ্টি পায় এবং নতুন মৌসুমে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে গোবরসার, কেঁচোসার এবং কিচেন বর্জ্যের তৈরি কম্পোস্ট এই সময় খুব কার্যকর।
পঞ্চমত, পাতায় পানি ছিটানো বা স্প্রে করা গাছকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে বা রাতে স্প্রে করা উচিত নয়—এতে ছত্রাকের ঝুঁকি বাড়ে। দুপুরের দিকে হালকা স্প্রে করলে পাতার আর্দ্রতা ঠিক থাকে।
সবশেষে, শীতে গাছ কম বড় হয়, তাই ছাঁটাই খুব বেশি করা উচিত নয়। বেশি ছাঁটাই করলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। বরং শুকনো পাতা বা মৃত ডালগুলো কেটে ফেলে দিলে গাছ নতুন শিরা তৈরি করতে পারে।
শীত গাছের জন্য চ্যালেঞ্জের হলেও সঠিক পরিচর্যা করলে গাছগুলো শুধু টিকে থাকে না, বরং আরও সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে। একটু যত্ন, একটু নজর আর ভালোবাসা—এই তিনটাই গাছকে শুষ্কতা থেকে বাঁচিয়ে নতুন মৌসুমের জন্য প্রস্তুত রাখতে যথেষ্ট।

Comments
Post a Comment