Skip to main content

শীতে নবজাতক শিশুর যত্ন

 

শীতে নবজাতক শিশুর যত্ন

শীতের সকাল মানেই কুয়াশার চাদর, নিঝুম বাতাস আর হিমের কামড়। কিন্তু নবজাতকের কাছে শীত আসলে তাপমাত্রার মৌসুম নয়—এটা পৃথিবীর প্রথম পরীক্ষাগার। এখানে তার শরীরের প্রতিটি কোষ শিখছে কীভাবে ঠান্ডাকে চিনবে, উষ্ণতা ধরে রাখবে, আর মা নামের এক বিস্ময় তাকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখে। তাই শীতে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া কোনো নিয়মের বই নয়—এটা মা ও শিশুর মাঝের নীরব বিজ্ঞান, অনুভূতির হোমিওস্ট্যাসিস।


প্রথমত, নবজাতকের শরীর তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু মজার বিষয়, মায়ের বুকই পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভুল ‘প্রাকৃতিক হিটার’। ডাক্তাররা বলে স্কিন-টু-স্কিন কেয়ার; কিন্তু মায়ের দৃষ্টিতে এটা শুধু “বুকে নিয়ে রাখা”— অথচ এটাই শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে নিখুঁত প্রযুক্তি। শীতে এই স্পর্শ সময় আরও বাড়িয়ে দিন। যখনই দেখবেন শিশুর হাত-পা ঠান্ডা, তাকে কম্বলে মুড়িয়ে রাখার আগে বুকের সঙ্গে চেপে ধরুন। পাঁচ মিনিটের স্পর্শ শিশুকে যেকোনো মোটা কম্বল থেকেও বেশি উষ্ণতা দেয়।


দ্বিতীয়ত, শীত মানেই মোটা পোশাকের হিসেব-নিকেশ। কিন্তু এখানে বড় ভুল হয়—আমরা মনে করি বেশি পোশাক মানেই বেশি নিরাপত্তা। আসলে নবজাতক অতিরিক্ত গরমেও অস্বস্তি বোধ করে। শীতে পোশাক বেছে নিতে হবে “স্তর-স্তর” কৌশলে। একবারে মোটা জ্যাকেট না দিয়ে ৩–৪টি হালকা স্তর দিন, যাতে আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে এক-দুটি খুলে ফেলা যায়। ঘরের ভেতরে টুপি না পরানোই ভালো; কারণ মাথা দিয়ে তাপমাত্রা বেরিয়ে যায় ঠিকই, তবে অতিরিক্ত গরম হলে শিশুর ঘুম ব্যাহত হয়।


তৃতীয়ত, শীতকাল শিশুর ত্বকের কাছে যেন ধুলোমাখা মরুভূমি। মায়ের একটি ভুল—পরিষ্কার রাখতে বারবার গোসল করানো—শিশুর ত্বককে আরও শুষ্ক করে ফেলে। শীতে নবজাতকের গোসল সপ্তাহে মাত্র দুইবার যথেষ্ট। গোসলের আগেই হালকা উষ্ণ নারকেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে স্কিন প্রি-ওয়ামিং করলে শিশুর ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। আর গোসল শেষে লোশন নয়—তেলই ভালো কাজ করে; কারণ তেল শিশুর স্কিন ব্যারিয়ারকে শক্ত করে।


চতুর্থত, ঘর যত উষ্ণ রাখবেন ভেবেছেন, ঠিক সেখানে লুকিয়ে থাকে আরেক বিপদ। মোড়া ঘর বাতাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। নবজাতকের শ্বাসপ্রশ্বাস খুবই সংবেদনশীল, তাই শীতে ঘরে হালকা বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা জরুরি। সকালে মাত্র পাঁচ মিনিট জানালা খুলে দিলে ঘরের আর্দ্রতা ও অক্সিজেনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। এতে শিশুর কাশি, নাক বন্ধ হওয়া ও ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।


পঞ্চমত, শীতে সবচেয়ে অবহেলিত অংশ—মায়ের নিজের যত্ন। আসলে নবজাতকের যত্ন মানে মায়ের যত্ন। ঠান্ডায় যখন মায়ের হাত-পা জমে যায়, তখন তার দুধের প্রবাহও কমে যায়। তাই হালকা উষ্ণ পানি পান, গরম খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম—এসব শুধু মায়ের জন্য নয়, শিশুরও সুরক্ষা। কারণ নবজাতক মায়ের শক্তির উপর নির্ভরশীল, তার খাবার, তার উষ্ণতা, তার মনোভাব—সবকিছু শিশুর প্রতিটি ঘুমে প্রতিফলিত হয়।


শেষ কথা হলো—শীতে নবজাতকের যত্ন নেওয়া কোনো গাইডলাইন নয়, এটা এক ধরনের ছায়া হয়ে থাকা। বাইরে ঠান্ডা যতই হোক, মায়ের কোলে সে এক ছোট্ট গ্যালাক্সি—যেখানে উষ্ণতা তৈরি হয়, নিরাপত্তা জন্মায়, আর ভালোবাসাই হয়ে ওঠে শিশুর প্রথম শীতের কম্বল।

Comments

Popular posts from this blog

চোখের নিচে বালি রেখা দূর করার উপায়

  চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles) অনেকের জন্যই বিরক্তিকর সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বা বয়স বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চোখের চারপাশের কালচে দাগ হওয়ার কারণ চোখের চারপাশের কালচে দাগ (Dark Circles) হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, বয়স বৃদ্ধিজনিত ত্বকের পরিবর্তন, পানিশূন্যতা, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ, জেনেটিক কারণ ও অনিয়মিত জীবনযাপন। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সহজ পদ্ধতি: ১. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের অভাবে চোখের চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা কালো দাগ হয়। তাই রাতে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ২. শসার ব্যবহার শসার রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। চোখের ব্যবহার করলে অনেকটা কালো দাগ কমবে। ক...

ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়

  ত্বকের কালো দাগ দূর করার সহজ ও কার্যকর উপায় Pimple  ত্বকের কালো দাগ অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ হতে পারে। ব্রণ, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি, হরমোনজনিত পরিবর্তন, বা ত্বকের আঘাতের কারণে এসব দাগ দেখা দিতে পারে। তবে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসার মাধ্যমে  ত্বকের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু উপকারী উপায়— ১. লেবুর রস ও মধু ব্যবহার করুন লেবুর রসে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সংবেদনশীল ত্বকে লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। ২. অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। ৩. কাঁচা হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন Tarmaric powder  হলুদে থাকা কিউমারিন যৌগ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ কা...

সরিষার তেলের গোপন তথ্য / sorisa teler karjokarita

  সরিষার তেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শুধু রান্নার কাজেই নয়, বরং শারীরিক যত্নেও বহুল ব্যবহৃত। বিশেষ করে নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার বিষয়টি আমাদের লোকজ চিকিৎসা ও আর্বুদ চর্চায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহ্যগত কারণও রয়েছে। চলুন, জেনে নিই নাভিতে সরিষার তেল দেওয়ার উপকারিতা ও সম্ভাব্য প্রভাব। ১. ত্বকের যত্নে সহায়তা নাভি শরীরের একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যা ত্বকের তেল নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। সরিষার তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা নাভির চারপাশে ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। এটি ত্বককে মসৃণ এবং কোমল রাখতেও সাহায্য করে। ২. হজম শক্তি উন্নত করে (sorisa) নাভিতে সরিষার তেল ব্যবহার করলে হজম প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, নাভির মাধ্যমে তেলের উপাদান শরীরে প্রবেশ করে হজমের কার্যক্রম উন্নত করতে পারে। এটি গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। ৩. হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখা নাভিকে শরীরের কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। সরিষার তেলের মতো প্রাকৃতিক তেল নাভিতে দিলে ...